هُوَ الَّذِىْ بَعَثَ فِىْ الْاُمِّيّٖنَ رَسُوْلاً مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍۙ
وَّاٰخَرِيْنَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوْا بِهِمْؕ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
৩। তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাহাদেরই মধ্য হইতে এক রসূল আবির্ভূত করিয়াছেন, যে তাহাদের নিকট তাঁহার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, এবং তাহাদিগকে পরিশুদ্ধ করে, এবং তাহাদিগকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও পূর্বে তাহারা প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল।
৪। এবং (তিনি তাহাকে আবির্ভূত করিবেন) তাহাদের মধ্য হইতে অন্য লোকের মধ্যেও যাহারা এখন পর্যন্ত তাহাদের সঙ্গে মিলিত হয় নাই। এবং তিনি মহাপ্ররাক্রমশালী, পরম প্রজ্ঞাময়।
(আল্ জুমু’আঃ ৩-৪)
হাদীস
“আমাদের মাহ্দীর জন্য দুইটি নিদর্শন নির্দিষ্ট আছে। আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পর এই নিদর্শন অন্য কোনো মা’মুর, কোনো প্রত্যাদিষ্ট ধর্ম-সংস্কারকের সময়ে প্রকাশ পায় নাই। তারমধ্যে একটি হলো প্রতিশ্রুত মাহ্দীর সময়ে রমযান মাসের মধ্যেকার প্রথম তারিখে চন্দ্রগ্রহণ হবে এবং সূর্যগ্রহণ হইবে মধ্য তারিখে।” [দারকুতনি, ১ম জেলদ, পৃষ্ঠা: ১৮৮]
অমৃতবাণী
আমার কাছে হাজার হাজার প্রমাণ আছে, কিন্তু এতে যদি তোমরা সন্তুষ্ট হতে না পার, তবে আমার কথা গ্রহণ করো না, আমার বিরোধীদের কথাও গ্রহণ করো না; খোদা তা’আলার কাছে যাও এবং জিজ্ঞাসা কর যে, আমি সত্যবাদী কিনা। যদি খোদা তা’আলা বলে দেন যে, আমি মিথ্যাবাদী, তবে নিশ্চয় আমি মিথ্যাবাদী। কিন্তু যদি খোদা তা’আলা বলে দেন যে, আমি সত্যবাদী তবে আমার সত্যতা গ্রহণ করেত তোমার আপত্তি কেন?
আহ্মদীয়া মুসলিম জামা’তের পক্ষ থেকে সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও সালাম। একটি ঐশী নেয়ামতের সংবাদ সবার কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কয়েকটি কথা বিনীতভাবে উপস্থাপন করছি।
অন্যান্য সব মুসলমানের মত আমরাও হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হিসাবে ইমাম মাহ্দী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিলাম। আজ থেকে শতাধিক বছর আগে ১৮৮৯ খৃষ্টাব্দে তথা ১৩০৬ হিজরী সনে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক নিভৃত গ্রামে হযরত মির্যা গোলাম আহ্মদ (আঃ) সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ হবার দাবী করেন। আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে তাঁকে যাঁচাই করে সত্য মাহ্দী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্ হিসাবে গ্রহণের তৌফিক লাভ করেছি। কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে একথা সুস্পষ্ট, খাতামান্নাবীঈন (সাঃ)-এর আধ্যাত্মিক কল্যাণে ও তাঁর আনুগত্যে তাঁরই উম্মত হতে ইমাম মাহ্দী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্’র চতুর্দশ শতাব্দীর শিরোভাগে আগমনের কথা। হযরত মির্যা সাহেব তদনুযায়ী সঠিক সময়ে আগমন করেছেন।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন:
“ইমাম মাহ্দী আবির্ভূত হবার সংবাদ পাওয়া মাত্রই তাঁর হাতে বয়’আত করিও, যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয়; কেননা নিশ্চয় তিনি আল্লাহ্র খলীফা আল-মাহ্দী”। (সুনানে ইবনে মাজা-বাবু খুরূজুল মাহ্দী)
যাঁরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপরোক্ত আদেশানুযায়ী তাঁকে মান্য করে তাঁর বয়’আত গ্রহণ করেছেন তারাই আহ্মদীয়া মুসলিম জামা’তের সদস্য।
আহ্মদীয়া মুসলিম জামা’তের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহ্মদ কাদিয়ানী (আঃ) {জন্ম ১৮৩৫, মৃত্যু ১৯০৮ খৃঃ}। তিনি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট থেকে ইলহাম প্রাপ্ত হয়ে জগতের সংশোধনকল্পে মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হবার দাবী করেন আর বলেন, তিনি সেই ‘প্রতিশ্রুত মসীহ্’ ও মাহ্দী যাঁর আগমনের সুসংবাদ স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) করেছিলেন, যাঁর আবির্ভাবের মাধ্যমে সব ধর্মমতের ওপর ইসলাম ধর্মের বিজয় নির্ধারিত।
ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর সত্যতা সম্পর্কে হযরত রসূল করীম (সাঃ) বলেছেন:
“নিশ্চয় আমাদের মাহ্দীর সত্যতার এমন দু’টি লক্ষণ আছে, যা আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি অবধি আজ পর্যন্ত অন্য কারও সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ প্রদর্শিত হয়নি। একই রমযান মাসে (চন্দ্র গ্রহণের) প্রথম রাতে চন্দ্র গ্রহণ হবে এবং (সূর্য গ্রহণের) মধ্যম তারিখে সূর্য গ্রহণ হবে”। (দারকুতনী-১৮৮ পৃঃ এবং আরও ছয়টি প্রসিদ্ধ কিতাবে এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে)
উল্লেখিত গ্রহণদ্বয় ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দে পূর্ব গোলার্ধে এবং ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে পশ্চিম গোলার্ধে সংঘটিত হয়েছে। (আযাদ পত্রিকা উর্দূ লাহোর, ৪ ডিসেম্বর ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দ, সিভিল এন্ড মিলিটারী গেজেট, লাহোর, ৬ ডিসেম্বর ১৮৯৬ খৃষ্টাব্দ), এছাড়া চন্দ্রপাড়ার পীর সাহেবের পুস্তিকা ‘মদীনা কলকি অবতারের সফিনা’, পৃষ্ঠাঃ ২৫)
হযরত মির্যা গোলাম আহ্মদ (আঃ) প্রথম ২৩ মার্চ, ১৮৮৯, ভারতের লুধিয়ানা শহরে চল্লিশজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তির বয়’আত গ্রহণ করেন আর মহানবী (সাঃ)-এর ‘আহ্মদ’ নাম অনুযায়ী এই জামা’তের নাম ‘আহ্মদীয়া মুসলিম জামা’ত’ রাখেন।
তিনি পবিত্র কুরআন থেকে অকাট্টরূপে প্রমাণ করেন, বনী ইসরাঈলী নবী হযরত ঈসা (আঃ)-এর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রায় ৮৮ খানা পুস্তক রচনা করেন এবং খৃষ্টান, আর্য্য-সমাজী আর অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে পরিচালিত ইসলাম-বিরোধী হামলাসমূহকে তিনি আজীবন নজিরবিহীনভাবে প্রতিহত ও পরাভূত করেন। ১৯০৮ সনে তাঁর মৃত্যুর পর রসূল করীম (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী (খিলাফত আলা মিনহাজিন্ নবুওয়ত) অনুযায়ী আহ্মদীয়া মুসলিম জামা’তে নবুওয়তের পদ্ধতিতে খিলাফত পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জামা’তের বর্তমান খলীফা হলেন হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই:)। খিলাফত ব্যবস্থার কল্যাণে এই জামা’ত এখন বিশ্বের ১৮৯টি দেশে হাজার হাজার শাখায় বিস্তৃত। কোটি কোটি মানুষ ইতোমধ্যে এই ঐশী জামা’তে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষের মাত্র এক বছরেই চার কোটি তের লক্ষেরও অধিক লোক এই ইলাহী জামা’তভুক্ত হয়েছেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জাতি তথা আফ্রিকায় এ জামা’ত শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল স্থাপন করেছে। এছাড়া এ জামা’ত স্যাটেলাইট টেলিভিশন MTA (মুসলিম টেলিভিশন আহ্মদীয়া)-এর মাধ্যমে দিবারাত্র বিশ্বের প্রধান প্রধান ৮টি ভাষায় ইসলামের সৌন্দর্য্য এবং শান্তিপূর্ণ শিক্ষা প্রচার করে যাচ্ছে।
এ পর্যায়ে আহ্মদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতার কয়েকটি দাবী উপস্থাপিত হলো:
“হে ভাই সকল! আমি মহা সম্মানিত আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত। ওলীদের জ্ঞান-ভান্ডার (ইলমে লাদুন্নী) থেকে আমাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে। আবার, এই উম্মতের ধর্ম সংস্কারের লক্ষ্যে, মীমাংসাকারীরূপে এদের মত-বিরোধের নিস্পত্তি করার জন্য, ক্রুশীয় মতবাদকে ঐশী নিদর্শনাদির সাহায্যে ধ্বংস করতে আর খোদা-প্রদত্ত ক্ষমতা দ্বারা জগতে একটি পবিত্র পরিবর্তন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে আমাকে শতাব্দীর শিরোভাগে আবির্ভূত করা হয়েছে। সুস্পষ্ট ইলহাম ও সত্য ওহী দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে ‘মসীহ্ মাওউদ’ আর ‘প্রতিশ্রুত মাহ্দী’ নামে সম্বোধন করেছেন। আমি ভন্ড বা প্রতারকদের অন্তর্ভূক্ত নই, আমি মিথ্যাচারীও নই, মানুষকে বিপথে পরিচালনাকারীও নই”। (‘নজমুল হুদা’ পুস্তক, রূহানী খাযায়েন, ১৪তম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৫৯)
“ধর্ম সংস্কারের লক্ষ্যে খোদার পক্ষ থেকে যার আসার কথা ছিল সেই ব্যক্তি আমিই। যাতে করে ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিলুপ্ত ঈমানকে আমি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি আর খোদার নিকট থেকে শক্তিলাভ করে তাঁরই প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জগতকে সংশোধন, তাকওয়া ও সত্যনিষ্ঠার দিকে আকর্ষণ করি আর আমি যেন এদের বিশ্বাস ও আচরণগহত ভুলত্রটি দূরীভূত করি আর...আল্লাহ্র ওহী দ্বারা আমাকে একথা সুস্পষ্টরূপে বুঝানো হয়েছে, এই উম্মতের জন্য সূচনালগ্ন থেকে যে মসীহ্ সম্বন্ধে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল আর সেই শেষ ‘মাহ্দী’-ইসলামের অধঃপতনের যুগে, পথভ্রষ্টতার বিস্তৃতির যুগে খোদা তা’আলার কাছ থেকে যার সরাসরি ‘হিদায়াত’ লাভ করার কথা ছিল আর ঐশী তকদীরে সেই আধ্যাত্মিক খাদ্যভান্ডার মানবজাতির সামনে যাঁর পক্ষ থেকে নতুনভাবে পরিবেশন করা নির্ধারিত ছিল, যাঁর আগমনের সুসংবাদ তের’শ বছর পূর্বে আমাদের মহানবী (সাঃ) প্রদান করেছিলেন-আমিই সেই ব্যক্তি”। (‘তায্কিরাতুশ শাহাদাতাইন’ পুস্তক, রূহানী খাযায়েন, ২০তম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩,৪)
“আমি এখন কেবল আল্লাহ্র প্রতি কর্তব্য হিসাবে অতীব জরুরী এই বিষয়টি জানাচ্ছি, আল্লাহ্ তা’আলা চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর প্রারম্ভে সুরক্ষিত ইসলাম ধর্মের সংস্কার ও সমর্থনের উদ্দেশ্যে আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট করে প্রেরণ করেছেন।
এই রোগাক্রান্ত যুগে কুরআন শরীফের মাহাত্ম্য আর মহানবী হযরত মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা আমার কর্তব্য। আর খোদা-প্রদত্ত আত্মিক জ্যোতিঃ, অনুগ্রহরাজি, ঐশী নিদর্শন আর খোদা-প্রদত্ত বিশেষ জ্ঞান দ্বারা ইসলাম ধর্মের ওপর আক্রমণকালী সকল শত্রুকে প্রতিহত করাও আমার কাজ”।
(‘বারাকাতুদ্ দোয়া’ পুস্তক, রূহানী খাযায়েন, ৬তম খন্ড)
সুধী পাঠক! খোদা তা’লার চিরন্তন বিধান অনুযায়ী উগ্র মৌলবাদীদের পক্ষ থেকে এই ঐশী জামা’তের প্রচন্ড বিরোধিতা চলছে। আপনাদের কাছে বিনীত আবেদন এই যে, আহ্মদীয়াত সম্বন্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে অনুগ্রহপূর্বক আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করুন।
No comments:
Post a Comment